প্রায় ৭০ দিন পর গত কয়েক দিন ধরে দেশে করোনা শনাক্ত বেড়েছে এবং প্রতিদিন প্রায় ২ হাজারের বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
উদ্বেগের প্রধান কারণ হলো, গত সোমবার করোনায় ২১ জন মারা গেলেও মঙ্গলবার মৃত্যুর সংখ্যা ৩৯-এ চলে আসে। এটি তাপমাত্রা হ্রাস শুরু হওয়ার সাথে সাথে ভাইরাসটি মারাত্মক হয়ে উঠছে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসছে, মাস্ক পরতেই হবে: প্রধানমন্ত্রী
গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সংক্রমিত রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ সব হাসপাতালকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সরকার যদি নাগরিকদের বাসা থেকে বের হওয়ার পর মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করাসহ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মানাতে ব্যর্থ হয় তাহলে আগামী দিনগুলোতে যখন তাপমাত্রা গড়ে ১৫ ডিগ্রির নিচে নেমে আসবে তখন দেশকে ‘চড়া মূল্য দিতে হবে’ বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
দেশের বর্তমান করোনা পরিস্থিতি
বৃহস্পতিবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩০৫ জনে।
এছাড়া, নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৩৬৪ জনের শরীরে। যার ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৪১ হাজার ১৫৯ জনে পৌঁছেছে।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। আর মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৬ দশমিক ৯২ শতাংশ।
এদিকে, করোনা থেকে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৭২২ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮০ দশমকি ৮৬ শতাংশ।
এর আগে, সোমবার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ২১ জনের মৃত্যু এবং ২ হাজার ১৩৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ যা গত ৭০ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ সংক্রমণ।
সর্বশেষ ৭ সেপ্টেম্বর দেশে ২ হাজার ২০২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল এবং এরপর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করে।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ১৮ মার্চ প্রথম একজনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মে এবং জুন মাসে করোনার প্রাদুর্ভাবের চূড়ান্ত সময়ে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হন এবং গড়ে প্রায় ৫০ জন মারা যান। সেই সময় শনাক্তের হার ছিল ২৪-২৫ শতাংশ।
তবে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে সংক্রমণের হার কিছুটা কমতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সংক্রমণের হার অক্টোবরে ১০ শতাংশে নেমে এসেছিল, তবে এখন এটি আবার বাড়তে শুরু করেছে।
৩১ অক্টোবর দেশে ১ হাজার ৩২০ জন শনাক্ত হয়েছিলেন। শনাক্তে হার ছিল ১১ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
রাজধানীতে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রোগীদের ভর্তির হার বাড়ছে।
রাজধানীর কোভিড হাসপাতালে ৩ হাজার ৫১৯ শয্যার বিপরীতে গত ১ নভেম্বর ১ হাজার ৬৮৮ জনকে ভর্তি করা হয়েছিল। ১৫ দিনের ব্যবধানে হাসপাতালে রোগীদের সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৯৩৯ জন। ১ নভেম্বর রাজধানীতে রোগীদের ভর্তির হার ছিল ৪৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ যা গত সোমবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ দশমিক ১১ শতাংশ।
মৃত্যুর হার আবার বাড়ার সম্ভাবনা
ইউএনবির সাথে আলাপকালে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, শীতের মাসগুলোতে ভাইরাস থেকে প্রাণহাণির ঘটনা অবশ্যই বাড়বে কারণ লোকজন ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া ও হাঁপানির মতো শীতজনিত অনেক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘যদি এমন রোগে আক্রান্ত কেউ করোনায় আক্রান্ত হন তবে তার জীবন বাঁচানো কঠিন হবে। তাই, মৃত্যুর হার বাড়তে পারে।’
তিনি বলেন, সরকারের উচিত জনগণকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলার জন্য উদ্বুদ্ধ করা। যেমন মাস্ক পরা, ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, স্যানিটাইজার ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম এড়ানো এবং কোনো সংক্রমিত ব্যক্তির কাছাকাছি আসার পর কোয়ারান্টইনে থাকা।
হাসপাতালের পরিস্থিতি
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, শীতের আগমনের সাথে সাথে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার কারণে আগামী দিনে করোনার রোগীদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা মোকাবিলায় সরকারকে সব কোভিড-১৯-এর জন্য নির্ধারিত হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা দরকার।
ইকবালের মতে, ‘প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালে আইসোলেশন কেন্দ্র রয়েছে, তবে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম, ওষুধ ও অক্সিজেন, সুরক্ষা কিট এবং হাই ফ্লো ন্যাসাল ক্যানুলার অভাব রয়েছে। এছাড়া জেলা হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা এবং অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা উচিত।’
তিনি বলেন, যৌক্তিক সহায়তার অভাবে অতীতে জাতিকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে। ‘আমি সরকারকে অনুরোধ করব এবার ভুলটি আর করবেন না। সরকারের উচিত স্বাস্থ্যকর্মীদের যেকোনো উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ নিরাপত্তা কিট প্রস্তুত রাখা।’